বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ২০১৯ সালের ১লা জানুয়ারি বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি ৫৫ লক্ষ ৭০ হাজার জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১,১১৬ জন (উৎস: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো)। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে জনসংখ্যা ঘনত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। জনসংখ্যা ঘনত্বের দিক দিয়ে বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধিষ্ণু অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ।
বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য
• জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও বৃদ্ধির হার হ্রাস পাচ্ছে।
• আয়তন ও সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি।
• নারী-পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান।
• দেশের অর্ধেক লোক পরনির্ভরশীল।
• জন্মহার মৃত্যুহার অপেক্ষা কম হ্রাস পেয়েছে।
• অধিকাংশ লোক গ্রামে বাস করে।
• উন্নত দেশগুলোর তুলনায় গড় আয়ুষ্কাল অনেক কম।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার (Population growth rate) : বাংলাদেশের জনসংখ্যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯১ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২.১৭%, ২০০১ সালে ১.৪৮% এবং ২০১১ সালে ১.৩৭%। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৯৮১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে নাকি কমেছে তার একটি গ্রাফ তৈরি কর।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার
সাল | বার্ষিক বৃদ্ধির হার (শতকরা) |
১৯৮১ | ২.৩১ |
১৯৯১ | ২.১৭ |
২০০১ | ১.৪৮ |
২০০৯ | ১.৫ |
২০১১ | ১.৩৭ |
বার্ষিক বৃদ্ধির হার
৩.০ | |||||
২.৫ | |||||
২.০ | |||||
১.৫ | |||||
১.০ | |||||
.৫ | |||||
০ | ১৯৮১ | ১৯৯১ | ২০০১ | ২০০৯ | ২০১১ |
সাল |
বয়স অনুযায়ী জনসংখ্যা বণ্টন (Population distribution according to age group)ঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পরিবর্তনশীল বয়সের প্রাধান্য। বিভিন্ন সালের গণনা থেকে দেখা যায় দেশের প্রায় অর্ধেক লোক পরনির্ভরশীল শিশু-কিশোর, এছাড়া সামান্য বৃদ্ধ লোকও রয়েছে। ২০০৫ সালের কাঠামো থেকে দেখা যায় ৬০ থেকে ৯০ বছরের ঊর্ধ্বে জনসংখ্যা ১.৫ মিলিয়নের কম এবং পুরুষের চেয়ে মহিলার সংখ্যা বেশি। কাঠামো ব্যবহার করে নিচের কাজটি পূরণ কর ।
কাজ : ১। সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা কোন বয়সের ? ২। কর্মক্ষম জনসংখ্যা কোন বয়স কাঠামোতে ? ৩। কর্মক্ষম জনসংখ্যার ও নির্ভরশীল জনসংখ্যার অনুপাত বের কর। |
যে কোনো দেশের ভূমি সীমিত এবং প্রাকৃতিক সম্পদ নির্দিষ্ট। বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি ফলে ভূমি ও সম্পদের উপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবেও কিছু সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা (Population problem of Bangladesh)
• জমির খণ্ডবিখণ্ডতা = উৎপাদন হ্রাস
• মাথাপিছু আয় হ্রাস = জীবনযাত্রার মান নিচু
• অত্যধিক জনসংখ্যা = স্বাস্থ্যসেবার মান কম
• জনসংখ্যা বৃদ্ধি = স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল
মাথাপিছু আয় কম, সঞ্চয় কম এবং বিনিয়োগ কম ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না = বেকারত্ব বৃদ্ধি
• মূল্যবোধের অবক্ষয়, জীবিকার তাগিদে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই প্রভৃতি বৃদ্ধি = সমাজ জীবনে নিরাপত্তার
অভাব
• বাসস্থানের চাহিদা বৃদ্ধি এবং জমির ব্যবহার বৃদ্ধি কৃষি ভূমি হ্রাস =
• জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি এবং খাদ্য কম বৃদ্ধি = খাদ্য ঘাটতি
বন নিধন, পাহাড় কাটা বৃদ্ধি এবং বস্তি বসতি বৃদ্ধি = পরিবেশ দূষণ
• খাদ্য আমদানি বৃদ্ধি = বৈদেশিক মুদ্রা হ্রাস
• অত্যধিক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি, শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট, ভর্তি সমস্যা এবং প্রয়োজনীয় স্কুল-কলেজের অভাব শিক্ষার হার কম
বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের উপায় হলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। কৃষি ব্যবস্থা আধুনিকায়ন, দ্রুত শিল্পায়ন, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি প্রভৃতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা যেতে পারে। অধিক ঘনবসতিপূর্ণ স্থান থেকে কম ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলসমূহে লোক স্থানান্তর করে জনসংখ্যা সমস্যার কিছুটা সমাধান করা যেতে পারে। এছাড়াও জন্মনিয়ন্ত্রণ, শিক্ষার প্রসার প্রভৃতির মাধ্যমে জনসংখ্যা হ্রাস করা যেতে পারে। জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করা হলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে এবং জনসংখ্যা সমস্যা হ্রাস পাবে। কর্মদক্ষ জনসম্পদ গড়ে তোলা গেলে সমস্যা হ্রাস পাবে। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির মাধ্যমে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেলেও জনসংখ্যা সমস্যা সমাধান সহজ হয়।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধের উপায় (Measures taken to control population in Bangladesh)
জনসংখ্যা সমাধানের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের চেয়ে জনসংখ্যা যেন দ্রুত বৃদ্ধি না পায় তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যা হলো জনসংখ্যা। সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বেসরকারি সংস্থাগুলোও সচেতনতা বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত জনসংখ্যার কুফল প্রচার করছে। আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় এ দেশের জনশক্তি সমস্যা না হয়ে সম্পদে পরিণত হবে। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
• জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সফল প্রয়োগের ব্যবস্থা করা।
• বিলম্ব বিবাহ ব্যবস্থা চালু করা।
• বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ বন্ধ করা।
• নারী শিক্ষা ও নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
• দেশের জনগণের চিত্তবিনোদনের নানাবিধ সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা।
ধর্মান্ধতা, পুত্র সন্তানের উপর নির্ভরশীলতা, বংশ রক্ষা প্রভৃতি কুসংস্কার দূর করা।